কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

 

কিসমিস আমাদের সকলের নিকট একটি পরিচিত নাম। কিসমিস খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিসমিস আমাদের নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আঙুর রোদে শুকিয়ে কিসমিস বানানো হয়ে থাকে। কিসমিস বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।

এটি সরাসরি খাওয়া যায় এবং বিভিন্ন খাদ্য রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি খেতে খুব সুস্বাদু হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই শক্তি বা ক্যালরির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসতেছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি কিসমিস খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কিসমিসের পুষ্টিগুণ

কিসমিসের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম এবং সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম। এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না।

কিসমিস কিভাবে তৈরি করা হয়

এটি তৈরি করা হয় সূর্যের তাপ অথবা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সাহায্যে। তাপের ফ্রুক্টোজগুলো জমাট বেঁধে পরিণত হয় কিশমিশে। আর এভাবেই আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয় মিষ্টি স্বাদের কিসমিস। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হার্টকে ভাল রাখে এবং খারাপ কোলেস্টরল দূর করতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিসমিস হল আঙুর ফলের শুকনা রূপ। তাই কিসমিসকে শুকনো ফলের রাজাও বলা হয়ে থাকে। সোনালি ও বাদামি রঙের চুপসানো ভাঁজ হওয়া ফলটি খুবই শক্তিদায়ক। জেনে অবাক হবেন যে, কিসমিসের গুণাগুণ শুধু এর মিষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, শুকনো কিসমিস শরীরের সাথে সম্পর্কিত অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

কিসমিসের পুষ্টি উপাদান হজম শক্তির উন্নতি থেকে শুরু করে শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। রোজ একমুঠো কিশমিশ খাওয়ার যে কত উপকারিতা তা অনেকেই জানেন না। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছেন সবাই। তারই অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো পানি খান। কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। কিসমিস রোজকারের খাবারের মধ্যে রাখলে শরীরে ক্যাটেচিন এর মতন শক্তিশালী অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হজমশক্তি বাড়ায়

সুস্থ থাকার জন্য ভালো হজমশক্তি জরুরি। এক্ষেত্রে কিসমিস হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। হজমের সমস্যা বাড়াতে ২ থেকে ৪টি কিশমিশ সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে কিশমিশ খান এবং বাকি জলটাও পান করুন। এর ফলে হজমের সমস্যা খুব কম সময়েই দূর হয়ে যাবে।

রক্তশূন্যতা দূর করে

কিসমিস শরীরের রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখতে খুবই উপকারী। রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। কিসমিসে আছে, প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও এর মধ্যে আছে তামা যা রক্তে লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।

হার্টের জন্য উপকারী

হার্ট ভালো রাখতে কিসমিস একটি খুবই উপকারী খাবার। এছাড়া শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করতেও সাহায্য করে এটি। কিসমিসে আছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। কিসমিস না-খেয়ে শুধু কিসমিস পানি ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুণ দেখবেন, সেই ভিটামিন ও মিনারেল আপনার শরীরে প্রবেশ করছে।

যৌন স্বাস্থ্যের উপকারী

যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কিসমিস খাওয়া উপকারি। আসলে কিসমিসে বোরন নামক খনিজ পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে বোরন নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।কিসমিস বহুদিন থেকেই লিবিডো বর্ধনকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিসমিস সেক্স পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি কয়েকদিন কিসমিস খেয়ে দেখতে পারেন দেখবেন আপনার সেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেক্সে কিসমিসের উপকারিতা বিশেষ একটি গুন হলো এটি।

ক্যান্সার প্রতিরোধে কিসমিস

কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে। কিসমিসে আরো রয়েছে ক্যাটেচিন, যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। এটি ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। কিসমিস নিজের রোজকারের খাবারের মধ্যে রাখলে শরীরে ক্যাটেচিন এর মতন শক্তিশালী অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে বা যারা এতে আক্রান্ত, তাদের শরীরে বৃদ্ধির পরিমাণ খানিকটা হলেও কমিয়ে দেয়।

কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

কিশমিশ অত্যন্ত মিষ্টি হওয়ায় এটিতে প্রচুর গ্লুকোজ রয়েছে। এই গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। এছাড়া বিভিন্ন খনিজ, যেমন লৌহ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বোরন ইত্যাদিও আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো কিছুই আমাদের অতিরিক্ত গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য মঙ্গলজনক নয়। অর্থাৎ কেউ যদি বেশি পরিমাণে কিশমিশ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তার শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা দিতে পারে। তাই বেশি করে কিশমিশ খাওয়া আমাদের পরিহার করা উচিত। নিচে কয়েকটি কিসমিসের অপকারিতা তুলে ধরা হলো-

১। অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।

২। বেশি কিসমিস খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে পারে।

৩। কিসমিস অ্যালার্জির সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা কিসমিস পরিহার করাই ভালো।

৪। কিসমিস খাবার হজমে বিঘ্ন ঘটায়। তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

৫। কিসমস বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। তাই অধিক পরিমাণে কিসমিস খাওয়াবেন না।

FAQS-

# কিসমিস খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

=>না। কিসমিস খেলে শক্তি বাড়ে, ওজন মোটেও বাড়ে না।

# কিসমিস খেলে কি ওজন কমে?

=> এটি এক দিক দিয়ে সত্য।ফাস্ট ফুড খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলে মানুষ,তাই স্ন্যাকস হিসেবে কিসমিস দিয়ে তৈরী বিভিন্ন খাবার খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

# কিসমিস কি হিমোগ্লোবিনের জন্য ভালো?

=>কিসমিস আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।

# শুকনো কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ?

=>হ্যাঁ, শুকনো কিসমিস খাওয়া নিরাপদ। তবে কারো যদি কিসমিসে অ্যালার্জি থাকে তবে তা খাবেন না।

# কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি?

=>রাতে ঘুমানোর আগে ৪-৫ টি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে পানিসহ খেয়ে নিন। এটি আপনার অন্ত্র ও পাকস্থলীকে সুস্থ রাখবে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় উপশম দিবে।

শেষ কথা

কিসমিস খুবই উপকারী একটি ফল। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হজমের সমস্যা থেকে স্থূলতা, নিয়মতি কিশমিশ খেলে শরীরে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত কয়েকটি করে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস আমাদের প্রত্যেকের গড়ে তোলা উচিত।

# আমলকি খেলে কি কি উপকার হয়? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা #আঙ্গুর খেলে কি হয়? আঙুর ফলের উপকারিতা

Related posts

Leave a Comment